আজ- মঙ্গলবার, ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫। ২৮শে মাঘ, ১৪৩১

শিরোনাম

ডিপ্রেশন কি? জানতে হলে পড়ুন..

ডিপ্রেশন কী?

 

উত্তরঃ আমি এবং আমার স্রষ্টার মধ্যকার দুরত্বের নামই হল ডিপ্রেশন।

 

খাদিজা(রা:) খুব ধনী ঘরের মেয়ে ছিলেন। বিলাসিতার মধ্যে বড় হওয়াটাই স্বাভাবিক। নবিজী(স:) এর ইসলাম প্রচারের কারণে অন্যান্য গোত্র যখন কুরাইশদের অবরোধ দিল তখন নবিজী আর খাদিজা (রা:)এর গোত্রের শিশুদের আড়াই বছর তীব্র কষ্টে থাকতে হয়েছিলো।

এমনকী ক্ষুধার তাড়নায় গাছের পাতা পর্যন্ত খেয়েছিলেন।

 

হযরত বিলাল (রা) ছিলেন হাবশী ক্রীতদাস। ইসলাম কবুলের অপরাধে তাকে মরুভূমির রোদে ফেলে রাখা হতো, তার গায়ের চর্বি গলে যেতো।তারপরও তার মুখে লেগে থাকতো প্রশান্তি, রোদের তেজ তাঁর কালিমার তেজের কাছে পরাজিত হতো।

 

ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা তাঁর জীবনে আট বছর জেল খেটেছেন। জেলেই মরেছেন। অথচ তিনি কী বলেছিলেন ?

বলেছিলেন, দুনিয়াতেও একটা জান্নাত আছে, আমি আমার হৃদয়ে সে জান্নাতের খোঁজ পেয়েছি!!!!

 

গান শোনা, মুভি দেখা, মোটিভেশনাল বই পড়া বা মানুষের সাথে আড্ডা দিয়েই যদি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মিলত তবে গায়ক লিনকিন পার্ক আত্মহত্যা করলেন কেন? কিংবা অভিনেতা সুশান্ত শিং সুইসাইড করলেন কেন?মোটিভেশন গুরু ডেল কার্নেগি আত্মহত্যা করেছিলেন কেন?

 

আল্লাহ্ তাআলা, ইসলাম, ইমান আর ডিপ্রেশন এক অন্তরে একসঙ্গে থাকতে পারে না। যদি আমার মনে বিন্দুমাত্র ডিপ্রেশন থাকে, তার মানে আমার হৃদয়ে আল্লাহ্ নাই, বরং ওখানে শয়তান বাসা বেঁধেছে।

 

যারা ডিপ্রেশনে পড়ে বা আত্মহত্যা করে, মোটা দাগে দেখব, এরা অজ্ঞেয়বাদী নাহয় অবিশ্বাসী। কোনো মুসলিম যদি ডিপ্রেশনের স্বীকার হন, তাহলে তার ঈমান নিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে।

 

আবার অনেকেই তেড়ে বলবে, আমার পরিস্থিতি আপনি বুঝবেন না, আমার ফ্যামিলি প্রবলেম, মানি প্রবলেম, স্বামী প্রবলেম…..আরে ভাই থামেন তো!!

 

কোন পরিস্থিতির গল্প শুনবো ? বউ ভালো না? হযরত লূত (আ) এর স্ত্রীও ভালো ছিলো না। হযরত আছিয়া (আ) এর স্বামী ছিলেন কে ? ফেরাউন।

ফেরাউনকে ঈশ্বর না মানার অপরাধে তাঁকে টুকরো করে কেটে গরম তেলের মধ্যে ডোবানো হয়েছিল৷

 

আর আছে , চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছে না তাই ডিপ্রেশন?

 

হযরত নুহ (আ) প্রায় হাজার বছর দাওয়াত দিয়ে মাত্র আশি জনকে দাওয়াত কবুল করাতে পেরেছিলেন।

 

আপনজন কষ্ট দিয়েছে? অপবাদ দিয়েছে?

 

ইউসুফ (আ) এর ভাইয়েরা তাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে গেলো। ব্যবসায়ীর বৌ জুলেখার সাথে ব্যভিচার না করায় উল্টো অপবাদ দিয়ে সাত বছরের জেল দেওয়া হলো!!

 

এরপর দেখি কুরআন কী বলছে-

 

হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন বার্ধক্যে উপনীত, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তখন তাঁকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ শোনাল। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন- আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে, এরপরও তোমরা আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছ?! কীসের ভিত্তিতে তোমরা এ সুসংবাদ দিচ্ছ? ফেরেশতারা বলল, আমরা তো সত্য কথাই বলছি। আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি। বার্ধক্য আপনাকে স্পর্শ করেছে , করুক, এ বৃদ্ধ বয়সেই আপনার সন্তান হবে। আপনি নিরাশদের দলে যাবেন না। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের কথার জবাবে বললেন, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে? (সূরা হিজর, ৫৩-৫৬ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)

 

যারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় তাদের বলা হলো পথভ্রষ্ট!! এরপরও আমি ডিপ্রেশনের গল্প শুনবো?

 

আরেকটা গল্প শুনে নেই –

হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সর্বাধিক প্রিয় সন্তান ছিলেন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা বাবার এই আদরকে সহজে মেনে নিতে পারেনি তাই কৌশলে তাঁকে একদিন বাবার কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে কূপে ফেলে দিল।

 

আল্লাহর অসীম কুদরতে কূপ থেকে উঠে এসে একদিন তিনি মিশরের ধনভাণ্ডারের দায়িত্বশীল হলেন। আর যে ভাইয়েরা তাঁকে নিয়ে চক্রান্ত করেছিল, দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে তারা খাবার আনতে হাজির হলো তাঁর কাছে। এরপর এক কৌশলে তিনি তাঁর সহোদর বিনইয়ামীনকে নিজের সঙ্গে রেখে দিলেন।

 

দুই ছেলে হারিয়ে বাবা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম অন্য ছেলেদের বললেন, (তরজমা) ‘হে আমার ছেলেরা! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর রহমত থেকে তো কাফের ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না।’ {সূরা ইউসুফ (১২) : ৮৭}

 

শেষ লাইনটা আবার পড়ি তো!!

শুধু তাই না আল্লাহর রহমত থেকে ডিপ্রেসড হয়ে যাওয়া কবিরা গুনাহ।

 

এখন জেনে নেই হাদিস-

 

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’-এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে র্শিক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া’৷

 

(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৭০১)

 

গান বাজনা বা মুভি, বই আমাকে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। ডিপ্রেশনের একমাত্র চিকিৎসা হলো আল্লাহর দিকে ফেরত আসা। আমার শয়তান যখন আমাকে বলছে, তোর অনেক কষ্ট, তোর চেয়ে কষ্টে কেউ নাই, তখন আল্লাহ্ তাআলা বলছেন-

 

“কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে৷”

 

[সূরা আলাম নাশরাহ (৯৪) : ৫-৬]

 

শেষকথা:

 

প্রিয় অভিনেতা সুশান্ত শিং রাজপুত সুইসাইড করেছেন অথচ উনার ছিচোড়ে মুভিটা ছিলো মোটিভেশনাল, সুইসাইড বিরোধী একটা মুভি। মুভি তাঁকে ডিপ্রেশন থেকে ফেরাতে পারলো না।লাস্ট ছয়মাস উনি চিকিৎসাও নিচ্ছিলেন, লাভ হলো না। শরীরের রোগের চিকিৎসা আছে, মনের রোগের ভ্যাকসিন চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাই।

 

এখন পর্যন্ত যার মোটিভেশনাল বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করা হয়, সেই ডেল কার্নেগি শেষ জীবনে আত্মহত্যা করেছেন। মোটিভেশনের ফেরিওয়ালা নিজের বেঁচে থাকার এতটুকু মোটিভেশন জোগাড় করতে পারলেন না!!

 

লিনকিন পার্ক। যে ব্যান্ড এর গান শুনে আমাদের রাত্রি ভোর হয়, প্রবল উৎসাহ পাই, অনেকে যার গানে বেঁচে থাকার উপাদান খুঁজেন, সেই ব্যান্ড এর নামকরা শিল্পী নিজের গানে নিজের বাঁচার উপাদান খুঁজে পেলেন না। শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করলেন!!!

এই রকম আরও খবর

সর্বশেষ খবর